নিজস্ব প্রতিবেদক | রাজধানী ট্রিবিউন
ঢাকার ব্যস্ত মহাখালীতে রিকশা চালান রাজু মিয়া। কষ্টার্জিত আয় দিয়েই সংসার ও সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই স্বপ্নের পথে আরও একটি অধ্যায় যোগ হলো—ছেলের জন্য বাইসাইকেল নিয়ে তিনি ২০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন সাইকেলে চড়ে!
গাইবান্ধার পলাশবাড়ির হরিনাথপুর গ্রামের ছেলে রেজওয়ান ইসলাম এবার কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছে। কিন্তু গ্রামীণ রাস্তায় যাতায়াতের জন্য একটি বাইসাইকেল ছিল খুবই প্রয়োজন। বাবা রাজু মিয়া ছেলের সেই ছোট্ট চাওয়াকে পূরণ করতে গত এক মাস আগে ১,৫০০ টাকা দিয়ে ঢাকার মহাখালী থেকে একটি পুরাতন সাইকেল কিনে রাখেন।
কিন্তু সমস্যা হলো, সেটি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়িভাড়া লাগবে প্রায় ৩,০০০ টাকা। ঈদের ছুটিতে সব মিলিয়ে তাঁর হাতে ছিল মাত্র আড়াই হাজার টাকা। এটাতেই চলবে ঈদের খরচ, রিজার্ভ নেই।
এই অবস্থায় তিনি একটি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন—নিজেই সাইকেল চালিয়ে ছেলের কাছে পৌঁছে দেবেন সাইকেল ! বৃহস্পতিবার (৫ জুন) ফজরের নামাজ পড়ে সকাল ৫টার দিকে ঢাকার মহাখালী থেকে রওনা দেন। পথটা সহজ ছিলনা—জ্যাম, রোদ, ক্লান্তি, ঘুমহীন দীর্ঘ সময়—সব মিলিয়ে ২১ ঘণ্টার সাইকেল যাত্রা।
মধ্যরাতে বগুড়ার এক সেনাবাহিনী চেকপোস্টে তাঁকে দেখে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি যখন নিজের এই বিস্ময়কর কাহিনি বলেন, তখন সেনা সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে যান।
তাঁরা রাজু মিয়াকে খাবার দেন, সাইকেলসহ একটি ট্রাকে তুলে দেন এবং বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
রাজু মিয়া জানান, “ছেলে লেখাপড়া করে ভালো মানুষ হবে—এই স্বপ্নেই সব কষ্ট হাসিমুখে মেনে নেই। সাইকেল বাড়ি পৌঁছাতে না পারলে নিজেকে অপরাধী মনে হতো।”
তিনি আরও বলেন, “সেনা সদস্যরা না থাকলে হয়তো শেষ পর্যন্ত বাড়ি পৌঁছানো সম্ভব হতো না। আমি সবার কাছে দোয়া চাই—ছেলেটা যেন ভালো মানুষ হয়।”