ঈদুল আযহা মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এই দিনটি বিশ্বব্যাপী ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের শিক্ষা বহন করে। ইসলামের অন্যতম ইবাদত হলো কুরবানী, যা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করা হয়। এই আর্টিকেলে আমরা কুরবানীর নিয়ম-কানুন, যোগ্যতা এবং তাৎপর্য তুলে ধরব।
কুরবানীর তাৎপর্য ও ইতিহাস
কুরবানীর ইতিহাস শুরু হয় হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.) এর আত্মোৎসর্গের ঘটনা থেকে। আল্লাহর আদেশে প্রিয় পুত্র ইসমাঈল (আ.) কে কুরবানী দিতে প্রস্তুত হন ইবরাহিম (আ.)। এই মহান ত্যাগের স্মরণেই প্রতি বছর মুসলমানরা কুরবানী করে থাকেন।
কুরবানীর শর্ত ও যোগ্যতা
কুরবানী কবে করতে হয়?
জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে — ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী দুই দিন সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত কুরবানী করা যায়।
কে কুরবানী করতে পারবে?
যে মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক এবং মুকিম (অর্থাৎ ভ্রমণরত নয়)
যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে (সোনা/রূপা/মূল্যবান সম্পদ)
যাকাত দেওয়ার মতো সামর্থ্য থাকলে কুরবানী ওয়াজিব
কোন পশু কুরবানী করা যাবে?
গরু, মহিষ (২ বছর বয়স পূর্ণ)
ছাগল, ভেড়া (১ বছর বয়স, বা ভালো গঠনের হলে ৬ মাস হলেও চলবে)
গরু-মহিষে ৭ জন, উটেও ৭ জন অংশ নিতে পারে
ছাগল-ভেড়াতে একজন একা কুরবানী করতে পারবেন
পশু নির্বাচনে সতর্কতা
কুরবানীর পশু হতে হবে সুস্থ ও দাগমুক্ত। রোগগ্রস্ত, চোখ কানা, পা ভাঙা, দুর্বল বা অপুষ্ট পশু কুরবানী গ্রহণযোগ্য নয়।
কুরবানীর নিয়মাবলি
নিয়ত:
কুরবানী আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে। নিয়তে রিয়া বা লোক দেখানো থাকলে ইবাদত গ্রহণযোগ্য হবে না।
যবেহের সময়:
কুরবানী নিজ হাতে করা উত্তম, তবে না পারলে ইসলামী নিয়ম অনুসরণ করে অন্য কেউও করতে পারে।
মাংস বণ্টন:
১. নিজের জন্য
২. আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের জন্য
৩. দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে
নারীদের জন্য করণীয়
নারীরা সরাসরি পশু যবেহ করতে না পারলেও, তারা কুরবানীর নিয়তে অংশ নিতে পারে এবং কুরবানীর খরচ দিতে পারেন।
কুরবানীকে ঘিরে সমাজে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব
কুরবানী আমাদের শেখায় ধনী-গরিবের মাঝে সংহতি, মমত্ববোধ ও সহযোগিতার গুরুত্ব। ঈদুল আযহা কেবল ত্যাগের দিন নয়, বরং তা মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার অন্যতম উপলক্ষ।
উপসংহার
কুরবানী হলো একটি মহান ইবাদত। এটি কেবল পশু যবেহ নয়, বরং একজন মুসলমানের আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য, ত্যাগ এবং মানবিক চেতনাকে জাগ্রত করে। সঠিক নিয়ম ও নিয়তের মাধ্যমে কুরবানী পালন করলে তা অবশ্যই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।